১ মৌলিক সংখ্যা নয় কেন?
গণিতের
পরিভাষায় মৌলিক সংখ্যা অথবা মৌলিক (ইংরেজিতে Prime Number) হল এমন
প্রাকৃতিক সংখ্যা যার কেবলমাত্র দুটো পৃথক উৎপাদক আছে ১ এবং ঐ সংখ্যাটি নিজে।
অর্থাৎ যে সকল স্বাভাবিক সংখ্যাকে ১ এবং সে সংখ্যা
ছাড়া অন্য কোন সংখ্যা দ্বারা ভাগ যায় না,
তাকে মৌলিক
সংখ্যা বলে। প্রাইম হচ্ছে সংখ্যার কিছু মৌলিক ভিত্তি
যেগুলোকে ভাঙ্গা হলে আর একই রকম কিছু পাওয়া যায় না এবং যে গুলোর মাধ্যমে অন্য
যৌগিক সংখ্যাগুলো তৈরি হয়ে থাকে।
ইউক্লিড
খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সালের দিকে প্রমাণ করেন যে, মৌলিক সংখ্যা
অসীম সংখ্যা। পাটীগণিতের মৌলিক উপপাদ্য সংখ্যাতত্ত্বে মৌলিক সংখ্যার কেন্দ্রীয়
ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করে। যে কোন অশূণ্য প্রাকৃতিক সংখ্যা n কে
মৌলিক সংখ্যা উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যায়, যা মৌলিক
সংখ্যার গুণফল বা
তাদের বিভিন্ন ঘাতের গুণফল হিসাবে (যার মধ্যে শূণ্য ঘাত ও রয়েছে)। আরও উল্লেখ্য,
এই মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণের কাজটি কেবল একভাবেই করা যেতে পারে।
মৌলিক সংখ্যা
হবার ধর্মকে মৌলিকত্ব বা মৌলিকতা বলা বলা হয়। কোন সংখ্যা n এর মৌলিকতা
সাধারণ ভাগ করেই নির্ধারণ করা যায়, যেমন কোন সংখ্যা n
কে এর চেয়ে ছোট সকল পূর্ণ সংখ্যা m দিয়ে
ভাগ করলে
যদি দেখা
যায় n হল m এর গুণিতক, তাহলে বলা যায় তা মৌলিক নয়, বরং যৌগিক। বড়
বড় মৌলিক সংখ্যা হিসেব করার জন্যে নানারকম জটিল ও সূক্ষ্ম এলগরিদম তৈরি করা
হয়েছে, যাদের মাধ্যমে এই ভাগ করার কৌশল হতে দ্রুততর
উপায়ে মৌলিকতা নির্ধারণ করা যায়।
১ কেন মৌলিক
সংখ্যা নয় কেন ব্যাখ্যা :
১ হচ্ছে সংখ্যা গঠনের একক। যেকোন পূর্ণ সংখ্যা গঠনে এক নিশ্চিত ভাবে চলে আসে। অর্থাৎ প্রত্যেকটি
ক্রমিক পূর্ণ সংখ্যা ১ করেই বৃদ্ধি পায় এবং আমারা একের সাথে এক ক্রমান্বয়ে যোগ করে
যে কোনো স্বাভাবিক পূর্ণ সংখ্যা তৈরি করে ফেলতে পারি। সংখ্যা তৈরির কোনো মৌলিক
একক যদি থেকে
থাকে তাহলে সেতো হচ্ছে ১। কিন্তু তারপরেও ১ কে প্রাইমের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি কেননা
১ যদি প্রাইম হয় তাহলে পাটীগণিতের কিছু মৌলিক স্বীকার্য বা থিওরেমের কার্যত কোনো
অস্তিত্ব থাকে না।
এক প্রাইম নয়
এর প্রথম কারণ হচ্ছে প্রাইমের সংজ্ঞা। প্রাইমের সংজ্ঞা নির্ধারনের সময় কৌশলে! এককে
বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাইমের সংজ্ঞা হচ্ছে: “যেসব স্বাভাবিক পূর্ণ
সংখ্যা একের চেয়ে বড় এবং এক ও সেই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য নয়
সেগুলোই প্রাইম সংখ্যা”। যেহেতু সংজ্ঞার শুরুতেই বলে দেয়া
হয়েছে প্রাইম হতে হলে কোনো সংখ্যাকে একের চেয়ে বড় পূর্ণ সংখ্যা হতে হবে তাই এক
মৌলিক সংখ্যা নয়।
প্রাইমের
ধারনাটি গণিতবিদ ইউক্লীড সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে উপস্থাপন করেন যখন তিনি “পারফেক্ট নম্বর”
নিয়ে চিন্তা করছিলেন। তাঁর গবেষনায় জানা প্রয়োজন ছিলো কখন কোনো
পূর্ণ সংখ্যাকে অন্য সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায় এবং সেই জন্য তাঁর সেই
সংখ্যাগুলোকে খুঁজে বের করার প্রয়োজন হয়েছিলো যাদের একের চেয়ে বড় উৎপাদক
বা ফ্যাক্টর
নেই। এই সংখ্যাগুলো নিয়ে চর্চা করতে করতেই তিনি পাটীগণিতের মৌলিক
থিওরেমটি বিবৃত করেন।
“প্রতিটি পূর্ণ
সংখ্যাকে কেবলমাত্র একভাবেই তার প্রাইম উৎপাদকসমূহের গুণফলরূপে প্রকাশ করা যায়
যেখানে উৎপাদকগুলোর ক্রম নির্দিষ্ট থাকবে।“
এই থিওরেমে “কেবলমাত্র
একভাবেই” শব্দগুচ্ছ ভীষন গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে
আমরা ১৫ সংখ্যাটিকে বিবেচনা করি। এই সংখ্যাটিকে তার প্রাইম উৎপাদকে বিশ্লেষণ করলে
আমরা পাই:
১৫ = ৩ × ৫ এবং উৎপাদক ৩
এবং ৫ এর ক্রম নির্দিষ্ট করা হলো। অর্থাৎ ৩ এবং ৭ ক্রমপরিবর্তন করে যদিও লেখা যায়
১৫ = ৫ X ৩ কিন্তু ক্রম ছোট থেকে বড় সংখ্যায় নির্দিষ্ট
করায় এটাকে কেবল একভাবেই লেখা সম্ভব। এখন আমরা যদি ১ সংখ্যাটিকে প্রাইম হিসেবে
স্বীকৃতি দিই তাহলে ১৫ এর মধ্যে ১ কেও অন্তর্ভূক্ত করতে হয়।
১৫ = ১ × ৩ × ৫
কিংবা
১৫ = ১ × ১ × ৩ × ৫
এই
সমীকরণটিকে আরো অনেকভাবে লিখা যায়-
১৫ = ১ × ১ × ৩ × ৫
১৫ = ১ × ১ × ১ × ৩ × ৫
১৫ = ১ × ১ × ১ × ১ × ৩ × ৫
—————————–
---------------------------
কাজেই দেখা
যাচ্ছে ১ সংখ্যাটিকে যদি মৌলিক ধরে নেয়া হয় তাহলে পাটীগণিতের মৌলিক থিওরেম
সীমাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ কোনো পূর্ণ সংখ্যাকে “কেবল একভাবেই”
প্রাইম উৎপাদকের গুণফল হিসেবে প্রকাশ করা যাচ্ছে না বরং অসীম
সংখ্যক ভাবে প্রকাশ করা যাচ্ছে। তাহলে মৌলিক সংখ্যার যেই প্রয়োজনীয়তা কার্যত আর
কোনো ভিত্তি থাকে না। কেননা প্রাইম সংখ্যাকে অন্যান্য সংখ্যার সুনির্দিষ্ট
ভিত্তিমূল ধরা হয়।
কিন্তু
তারপরও যুক্তি থাকতে পারে। পাটিগণিতের থিওরেম অনুসারে যদি ১ কে মৌলিক হিসেবে ধরা
না যায় তাহলে আমরা কেন থিওরেমটি বদলে ফেলছি না? গণিতের জন্য থিওরেম
নাকি থিওরেমের জন্য গণিত? যুক্তিসংগত কথাই বটে। অবশ্য এই
একই যুক্তিসংগত চিন্তা করা যায় প্রাইমের জন্যও। প্রাইমের জন্যেও গণিত নয় বরং
গণিতের জন্য প্রাইম।
অন্যভাবে বলা
যায় যে, প্রত্যেক মৌলিক সংখ্যার দুইটি উৎপাদক থাকে। কিন্তু ১ এর একটি মাত্র উৎপাদক ১ নিজেই।
যে কোন
সংখ্যাকে মৌলিক সংখ্যা বলা যাবে যদি ঐ সংখ্যার শুধু ও শুধুমাত্র দুইটি উত্পাদক
থাকে । দুটির বেশী উত্পাদক থাকলেও মৌলিক সংখ্যা হবে না আবার দুটির কম উত্পাদক
থাকলেও মৌলিক সংখ্যা হবে না। অর্থাৎ দুটি উত্পাদক
থাকতেই হবে। কিন্তু ১ এর মাত্র একটি উত্পাদক । তাই ১ মৌলিক সংখ্যা নয়।
১ থেকে ১০০
এর মাঝের ২৫টি মৌলিক সংখ্যা গুলো হচ্ছে ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ১৯, ২৩, ২৯, ৩১, ৩৭, ৪১, ৪৩, ৪৭, ৫৩, ৫৯, ৬১, ৬৭, ৭১, ৭৩, ৭৯, ৮৩, ৮৯, ৯৭।
তথ্যসূত্র:
ইন্টারনেট, পাঠ্যপুস্তক ও গণিতের গ্রন্থপঞ্জী।
কোন মন্তব্য নেই
Please validate the captcha.